জাদুর পাহাড় | জীনের পাহাড়ের | ওয়াদি আল জিন - Eagle Eyes

Breaking

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, November 24, 2018

জাদুর পাহাড় | জীনের পাহাড়ের | ওয়াদি আল জিন


আপনি ইঞ্জিন বন্ধ গাড়িতে বসে আছেন, তারপরও গাড়ি চলছে। আর চলাটা স্বাভাবিক নয়, উল্টোভাবে! শুধু চলছে বললে ভুল হবে, ধীরে ধীরে গাড়ির গতি বাড়ছে, এখন আপনার কাজ শুধু স্টিয়ারিং ধরে গাড়ির দিকটি ঠিক রাখা। বিষয়টি অলৌকিক মনে হলেও এমনি ঘটনা ঘটে মদিনার রহস্যময় জীনের পাহাড়ের পথে।

ওয়াদি আল জিনের অবস্থান মদিনা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। মদিনা থেকে বের হয়ে কিছু খেজুর বাগান পার হয়ে যেতে হয় এলাকাটিতে। খেজুর বাগানের পর পাহাড়ি পথ। এই এলাকার পাহাড়গুলোও ব্যতিক্রম। ন্যাড়া পাহাড়, পাহাড়ের ওপর ধারালো সূচের ন্যায় ফলা ফলা মাটি দাঁড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হবে, এই তো ভেঙে পড়বে; কিন্তু না। এমন পাহাড় মক্কা, মদিনা কিংবা তায়েফের অন্য কোনো এলাকায় দেখা যায় না। এমন পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পিচঢালা সড়ক। আর সেই সড়কেই লুকিয়ে আছে এমন অপার বিস্ময়।

যেখানে ইঞ্জিন বন্ধ থাকলেও গাড়ি চলতে শুরু করে ঢালুর বিপরীতে। আর গাড়ির গতিও কিন্তু কম নয়, রীতিমতো ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ি চলতে থাকে। শুধু গাড়ি চলা নয়, পানির বোতল কিংবা পানি ফেললে, জুতা রেখে দিলে তাও ঢালুর বিপরীত দিকে গড়াতে থাকে। এটা কোনো গল্প নয়, বাস্তবের ঘটনা।

অবশ্য ওয়াদি আল জিন এলাকায় প্রবেশের সময় গাড়িকে কিছুটা বেগ পেতে হয়। পরে নামার সময় শুধু স্টিয়ারিং ধরে থাকা। ওয়াদি আল জিন এলাকার রাস্তা খুব উঁচু নয়, তার পরও শো শো আওয়াজে কান আপনি থেকে বন্ধ হয়ে যায়, পাহাড়ের ঢালে নেমে দাঁড়ালে মনে হয়, কেউ যেন পেছন থেকে ঠেলছে; এমন দুলুনি ভাব হয়।

 সৃষ্টির অপার রহস্যময় বিষয় পাহাড়-পর্বত। কেউ কেউ ধারণা করেন, জায়গাটিতে প্রচুর চুম্বকজাতীয় পদার্থ আছে তাই এমনটি হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো- পানি, পানির বোতল বা জুতায় চুম্বক কীভাবে আকর্ষণ করে? অনেকেই আবার বলেন, এটা জিনদের কারসাজি!

স্থানীয়দের কাছে এসব বিষয়ের কোনো সমাধান নেই। ফলে প্রচুর লোককথা এটা নিয়ে প্রচলিত। যেমন গাড়ির আরব ড্রাইভার আলী আহমাদ আস সালেমি জানালেন, ‘এখানে কোনো জিন-টিন নেই, এটা ‘আরদে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র মাটি। এই পাহাড়ের ওপর দিয়ে প্লেনও যেতে পারে না। এই পাহাড়ে উঠে নবী করিম (সা.) জিনদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। তখন নাকি কিছু জিন দুষ্টুমি করে পালিয়ে যেতে যায়। পরে বয়স্করা তাদের পালানো রোধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয় তাদের পথ উল্টে দিয়ে। তাই এখানে সবকিছু উল্টো চলে।’যদিও ইসলামের ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ মেলে না। নবী করিম (সা.) জিনদের ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন মক্কায়। এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু মদিনায় জিনদের সঙ্গে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায় না।


বর্তমানে ওয়াদি আল জিন এলাকাটি পর্যটন স্পট হিসেবে ধীরে ধীরে পরিচিতি পাচ্ছে। স্থানীয় আরবরা ছুটির দিন এখানে অবসর কাটাতে আসেন। এখানে বেশ কিছু স্থানে ছোট ছোট গাড়ি ভাড়া দেওয়ার দোকান গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে উল্টো পথে গাড়ি চলার অভিজ্ঞতা কেমন- তা পরখ করে দেখার সুযোগ মেলে।

২০০৯-২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার ওয়াদি আল বায়জায় একটি রাস্তা বানানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করার পর সমস্যা শুরু হয়। হঠাৎ দেখা যায় রাস্তা নির্মাণের যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে মদিনা শহরের দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে। যেনো অদৃশ্য কোনো শক্তি যন্ত্রপাতিগুলো মদিনার দিকে ঠেলছে। এমনকি পিচ ঢালাইয়ের ভারী রোলারগুলোও নাকি বন্ধ থাকা অবস্থায় আস্তে আস্তে ঢালু বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে।

এসব দেখে কর্মরত শ্রমিকরা ভয় পায়, তারা কাজ করতে অস্বীকার করে। ফলে রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যেখানে রাস্তার কাজ বন্ধ করা হয় সেখানে চারদিকে বিশাল খাড়া কালো পাহাড়। ওই পাহাড়ের পাদদেশে গোল চত্বরের মতো করে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনায় আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তাটি ২০০ কিলোমিটার করার কথা থাকলেও মাত্র ৪০ কিলোমিটার করেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জিনের পাহাড়কে ঘিরে মানুষের মাঝে রয়েছে অনেক কৌতূহল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন পাহাড়টি দেখতে। হজপালন শেষে মদিনায় আসা হাজিদের অনেকেই রসহ্যময় পাহাড়টি দেখার জন্য ভিড় জমান।

রহস্যময় পর্বতটি জিনের পাহাড়, যাদুর পাহাড় কিংবা চুম্বকের পাহাড়- যেনামেই পরিচিত হোক না কেন এটি পৃথিবীর অবাক এক বিস্ময়ের নাম। এ বিস্ময়ের রহস্য অজানা। স্থানটি দেখার কৌতুহল আরও বাড়ে। কিন্তু এ কৌতুহল মেটানোর কোনো উপায় নেই। এমন অতৃপ্তি নিয়েই ফিরতে হয় দর্শনার্থীদের। যেমন আমরা ফিরেছি অনেক প্রশ্নের উত্তর না পেয়েই!

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here