আমরা কারনে অকারনে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বেশ লম্বা সময় ধরে ফেইজবুক ব্যাবহার করে থাকি, পাশাপাশি ঢাকা হচ্ছে পৃথিবীতে ২য় বৃহত্তম সিটি যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার কারী রয়েছে, এবং ফেইজবুকে সময় অপচয় কারীর তালিকায় ১ নাম্বার, আমাদের ইয়ং জেনারেশান সবচেয়ে বেশি ফেইজবুক মুখি, আমরা ভাতে সাথে ৩ বেলা ফেইজবুক খেয়ে ফেলি, আর রাতে ঘুমানোর সময় ঘুমের ট্যাব্লেট হিসাবে ও ফেইজবুক ব্যাবহার করে থাকি, অতি মাত্রায় ফেইজবুক আসক্তি আমাদের অনেক বেশি ক্ষতি করছে, ক্ষতি করছে আমাদের মেধায়, উৎপাদনশীলতায়, আমাদের কালচার এবং অইতিঝ্য।
১০. নেশা/আসক্তি বা এডিশান
একটা লম্বা সময় ধরে ফেইজবুক ব্যাবহার করার ফলে এক ধরনের নেশা তৈরি হয়, যার ফলে আমরা ইচ্ছা করলেও এইফজবুক ব্যাবহার করা বন্ধ করে দিতে পারিনা। কখনো মনের অজান্তেই হুট করে ফেইজবুকে লগইন করে ফেলি। কি ভাবছেন? এটা কোন দুর্ঘটনা, না একেবারেই নয়, ফেইজবুকের প্রাক্তন কো পাউন্ডার সেয়ান পারকার নিজেই জানান ফেইজবুকের ডিজাইনটাই এমন ভাবে করা হয়েছে যেন মানুষ এতে খুব বেশি আকৃষ্ট হয়। এর ডিজাইন করার সময় মানুষের মন মানসিকতার ব্যাপারে সবছে বেশি গুরত্ত দেয়া হয়েছে। এবং এখানে সবচেয়ে বেশি গুরত্ত দেয়া হয়েছে জেন আপনি আমি এতে সবচেয়ে বেশি আসক্ত হয়ে পড়ি। যার ফলে তাদের প্রচারিত বিজ্ঞাপন আরও বেশি মানুষের কাছে তারা পৌঁছে দিতে পারে। সম্প্রতি ফেইজবুক কত্রিপক্ষ ঠিক একমনটা স্বীকার করেছে যে তারা ফেইজবুকে ইন্টারফেইজ ঠিক এমন ভাবেই ডিজাইন করেছে যেন মানুষ এটা খুব বেশি ব্যাবহার করে। তারা প্রতিনিয়ত ফেইজবুকের ডিজাইনে পরিবর্তন নিয়ে আসছেন, কারন ফেইজবুকে নিয়োগ ক্রিত মনোবিজ্ঞানীরাই তাদের সেসব পরিবর্তনের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। মনোবিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন যে কি ভাবে আমরা এটার প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হতে পারি। সম্প্রতি আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকার বেশিরভাগ মানুষ রাতে ঘুমানর আগে একবার করে হলেও ফেইজবুকে লগইন করছে। কিন্তু প্রায় ৬০% মানুষ এটা জানেনা যে কেন তারা হুট করে ফেইজবুকে লগইন করছে। বাচ্ছারা এই ব্যাবহারের দিক থেকে আরও অনেক বেশি যুকিপুর্ন।
০৯. তথ্য চুরি করা
ওকে আপনি হয়তো ভাবছেন কিভাবে আমাদের তথ্য ফেইজবুক চুরি করে? সত্যি বলতে ফেইজবুক আপনার মোবাইলের সবধরনের তথ্যই নিজের ডাটাবেজে নিয়ে নেয়। উদাহারন হিসাবে বলা যায় ইমেইল, ফোন নাম্বার, ছবি, কিন্তু আপনার আমার অজান্তে তারা আমাদের চলাচল, আচার আচরণ এমনকি আপনার প্রিয় পছন্দের জায়গা ও তাদের জানাশুনার ভান্দারে চলে যায়, আরও বলা যায় আপনি কোন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেছেন এবং কোণটা পছন্দ করেননি তার সবই তাদের ডাটাবেজে স্টোর করে নেয়। যাতে পরবর্তী সময় সঠিক বিজ্ঞাপনটা ও সে আপনার কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এবং বাড়তি আয় করে নিতে পারে। এবং বর্তমানে তাদের তৈরি আরটিফিশিয়াল ইন্টেলিঞ্জিস এর মাধ্যমে তারা আপনার ছবি দেখেই আপনাকে সনাক্ত করেতে পারে, যদি আপনি কোন ধরনের অপরাধের সাথে জুক্ত থাকেন তবে আপনাকে খুজে পেতে কাজটা ফেইজবুকের জন্য খুবই সহজ।
০৮. মানসিক দুর্বলতা
ফেইজবুকে অতিরিক্ত নির্বরশিলতা তরুন সমাজের মানসিক দুর্বলতা অনেক বেশি বারিয়ে তুলছে। পৃথিবীতে এমন একটা জেনারাশান জন্ম নিয়েছে যে তারা আজকাল ফেইজবুকের বাইরে খুব বেশি কিছু ভাবতে পারেনা। নিজের প্রতিমুহরতের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তারা ফেইজবুকে সবাইকে জানিয়ে ভালো বোধ করছে। কিন্তু তারা এটা ভুলে গেছে যে তারা নিজের ব্যাক্তিগত সব কিছুই অন্যর হাতে তুলে দিচ্ছে। উদাহারন সরুপ বলা যায় যে নিজেদের আচার আচরনে ফেইজবুক এবং বাস্তব জীবনে অনেক বেশি পার্থ্যক গড়ে দেয়। এছাড়া লাইক কমেন্টস ও সেয়ার পাওয়ার আশায় অন্যের ভালো মন্দ বিবেচনা না করে যে কোন কিছু ফেইজবুকে সেয়ার করতে দ্বিধা বোধ করা হচ্ছেনা। যার মধ্য অন্যতম একটি হচ্ছে সেলফি আসক্তি, এবং নিজেকে খুব পপুলার একজন হিসাবে গড়ে তোলার সস্তা মানসিকতা। যার ফলে মেধাশুন্য মানুষের কাতার অনেক বেশি বড় হচ্ছে, এখানে হয়তো তাদের তাদের চেয়ে ভালো উদাহরন আর কেউ হতে পারেনা।, শিফাত, পং পং, হিরু আলম, শুবা। সহ আরও অনেকে।
০৭। অসুস্থ রাজনিতি
আপনি যদি গত কয়েকবছরের রাজনীতি ভালো করে লক্ষ করে থাকেন তাহলে দেখবেন পক্ষ এবং বিপক্ষীয় দলের রাজনীতি আজকাল অনেক বেশি ফেইজবুক নির্ভর। এর জন্য ফেইজবুক তাদের ডাটা এলগরিদম এমন ভাবে তৈরি করেছে যাতে সবচেয়ে বেশি লাইক কমেন্টস ও সেয়ারের মাত্রা জেটাতে বেশি সেই পোষ্ট দ্রুত অনলাইনে থাকা ব্যাবহারকারিদের কাছে তুলে ধরা হয়, যার ফলে আপনি আমি আরও বেশি সময় ধরে ফেইজবুক ব্যাবহার করি। গত আমেরিকার নির্বাচনে ফেইজবুক অনেক বেশি প্রবাব বিস্তা করেছিল, করেছিল আমাদের দেশের সর্বশেষ নিরবাচনেও, এখানে সবচেয়ে বেশি ফায়দা লুটে নেয়া হয় মিথ্যে ভুয়া ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করে। যাতে সবচেয়ে বেশি দিধাগ্রস্ত করে তুলে সাধারন মানুষদের, যারা ভার্চুয়াল এই জগত সম্পর্কে খুব ভালো কোন ধারনা রাখেনা। তাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভুগ করে নেয় বিভিন্ন গুষ্টি। পাশাপাশি এমন প্রচার সুস্থ রাজনীতি বিকাশের অন্তরায়। সুতরাং সাবধান।
০৬. ভুয়া সংবাদ
সত্যি মিথ্যা যাই হউক কোন কারনে যদি কোন সংবাদ পাঠকের একটু ভালভাবে দৃষ্টি আকর্শন করে থাকে তবে তা খুব বেশি ভিউ হতে শুরু করে। ঠিক এই কারনে ফেইক সংবাদ সাধারন ও সত্যি সংবাদের চেয়ে প্রায় ৬ গুন বেশি পাঠক প্রিয় হয়ে থাকে। শুধু পাঠক প্রয়তায় সিমাবদ্দ নয়, এমন সংবাদ অনেক বড় আকারের ভুল সিদ্দান্ত নিতে ও সাধারন্দের উতসাহ দিয়ে থাকে। গত আমেরিকান নির্বাচনে যার প্রভাব অনেক বেশি ছিল বলে অনে করেন অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক। এছাড়া ফেইজবুক ব্যাবহার করে সাধারন গ্রাহকদের ঠকানোর মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
০৫. আচরণের পরিবর্তন
হ্যা, অইতিয্যগত ভাবে আমারা কোন না কোন সমাজে বড় হয়ে থাকি,এবং সেখানের নিয়ম নিতি বিধি নিষেধ মেনে জীবন ধারন করতে অব্যস্ত আমরা সবাই। যার সাথে আমাদের আচার ব্যাবহার ও জড়িয়ে আছে। কিন্তু আপনি কি লক্ষ্য করেছেন ফেইজবুক ব্যাবহার করার ফলে আপনার জীবনের কিছু ব্যাপার অনেক বেশি পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইয়েস ঠিক ধরেছেন, আমাদে আচরণগত অনেক পরিবর্তনের জন্য ফেইজবক দায়ি।
০৪. সৃষ্টিশীলতার অভাব
ওয়েল আমরা সবাই কম বেশি পরিবার বন্ধু বান্ধব ও অফিস আদালতে থাকাকালিন ফেইজবুক ব্যাবহার করি। যার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয় হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। অনেকগুলো গুরুত্ব অরগানাইজাশান এই ব্যাপারে মত দিয়েছে যে, কর্মক্ষেত্রে প্রায় সব কর্মীই দিনে অন্তত ২/৩ বার ফেইজবুকে লগইন করে তাদের নিউজফিড ছেক করছে। যাতে সপ্তাহ শেষে তারা তাদের কর্ম ঘণ্টার প্রায় ৫ ফেইজবুকে অপচয় করছে। মার্ক জুকারবার্গের আবিষ্কৃত টাইম কিলারের মেশিনের পেছনে অপচয় করা সময়ের ফলে বছর শেষে আমরা প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার লস করছি সারা পৃথিবী জুড়ে। অতিরিক্ত সময় ফেইজবুকে নষ্ট করার ফলে বিভিন্ন ধরনের অবসাধের জন্ম নেয়, যার ফলে মনোযোগ নষ্ট হয়, এবং সৃষ্টিশীল কর্মী কান্ডের অভাব দেখা দেয়। ২০১৫ সালের বেশ কয়েকটি গবেষণায় এটা উঠে এসেছে যে ছাত্র ছাত্রিরা মধ্য রাতে তাদের ফেইজবুকের নিউজফিড দেখার জন্য ঘুম নস্ট করে ফেইজবুকে সময় দেয়, যার ফলে তারা নিজেদের স্টাডিতে ভালো ভাবে মনোযোগ দিতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে মেধাহীন এভারেজ রেজাল্ট নিয়ে কলেজ বিশবিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। এবং ফঙ্গু হচ্ছে জেনারাশন।
০৩। ট্রেকিং
ওকে আমরা সবাই জানি যে ফেইজবুকে যা কিছু আমরা সেয়ার করছি তার সবই তাদের কাছে জমা থাকে, ইভেন আমাদের ইভ্রিডে এক্টিভিটিস তাদের কাছে খুবি গুরুত্তপুর্ন। মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি যে ফেইক একাউন্ট ব্যাবহার করছেন ফেইজবুক সেটাও খুব ভালোভাবে জানে। আমরা এটা জানি যে এসব ডাটা হয়তো বিজ্ঞাপনে কাস্টমারের মুভমেন্ট বুঝার জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। যাতে তারা তাদের ব্যাবসায়িক কেম্পেইন গুলো ভালোভাবে সফল করতে পারে, স্পেশাল্লি ইন ইকমার্স। ওয়েল এটা হয়তো তেমন কোন সমস্যা না। কিন্তু ২০১৮ সালে ফেইজবুক এমন কিছু আরটিফিশিয়াল ইন্টিলেজেন্স চালু করে তাদের এলগরিদমে যা সাধারন ব্যাবহার কারীর অতি গোপনীয় অনেক তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনার আমার ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড তার মধ্যে অন্যতম। কারন ফেইজবুক ভালো করেই জানে আপনি নেক্সট কি কাজ করতে যাচ্ছেন। সুতরাং পরবর্তি সময় ফেইজবুকে তথ্য দেয়ার সময় আপনি নিজেকে দুবার জিজ্ঞেস করবেন অবশ্যই।
০২. হ্যাপিনেস কমে জাওয়া
American Journal of Epidemiology সম্প্রতি তাদের গবেষণার এক রিপর্টে বলেছে যে, সাধারন মানুষ ভালো কিছু পাওয়ার জন্য ফেইজবুক ব্যাবহার করে থাকে, যার ফলে তারা নিজেদের লাইফ স্টরি, ছবি, এবং কর্মকাণ্ড ফেইজবুকে সেয়ার করে থাকে। কিন্তু এখান থেকেই বিপত্তি শুরু হয়। কারন মিথ্য অনুভুতি ও সহানভুতি পেতে পেতে অনেকেই এতে অব্যস্থ হয়ে পড়ে যার ফলে ধীরে ধীরে নিজেদের সৃষ্টিশীলতা, ও মানসিক শক্তি লোপ পেতে থাকে। গত কয়েকবছরে তারা এমন প্রায় ৫০০০ মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এসব তথ্য প্রকাশ করেছেন। যাতে আরও বলা হয়েছে অতিরিক্ত ফেইজবুক আসক্তি ধীরে ধীরে শারীরিক মানসিক অসান্তি বারিয়ে তোলার পাশাপাশি সান্তিপুর্ন জীবন যাপন মারাক্তক ভাবে ব্যাহত হয়। আশার কথা হচ্ছে অনেকে এমন খতির কথা অনুধাবন করতে পেরে তাদের ফেইজবুক একাউন্ট ডিলিট করে দিচ্ছে। Data Track Research এর মতে ফেইজবুক ডিলিট করেছে এমন মানুষের মধ্য প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ ই বেশ সুখি জীবন যাপন করছে।
০১. সমাধান
আমার কথাগুলো আপনার বিশ্বাস করা খুব জরুরী নয়, তবে নিজেকে দুবার প্রশ্ন করুন আপনি উত্তর পেয়ে যাবে। এছাড়া গত বছর বেশ কজন খ্যাতিমান ব্যাক্তি তাদের ফেইজবুক একউন্ট ডিলিট করে তার প্রমান ভালভাবেই দিয়েছেন। যাদের মধ্য অন্যতম হচ্ছেন, জিম ক্যারি, হোয়াটসাপ পাউন্ডার ব্রাইন এক্টন, অন্যতম। তবে এখনো ফেইজবুক ব্যাবহার কারী অনেক বেশি যা ধীরে ধীরে কমছে। ওয়েল আপনার বিশ্বাস নাও হতে পারে,তবে এটুকু জেনে নিন যে ফেইজবুক গত ৬ মাসে তাদের সবচেয়ে বেশি ব্যাবহারকারি হারিয়েছে, আর এবছর মার্ক জুকারবার্গ লস করেছেন ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ধন্যবাদ
No comments:
Post a Comment